আজব সব জীবগুলি - ১ (আর্চার ফিস)

আর্চার ফিস (Archerfish) খুব মজার (!) একটি মাছ। মজার বলতে খেতে মজা সেটা অবশ্য বলিনি, এর খাদ্য সংগ্রহ করা পদ্ধতিটির কথা বুঝিয়েছি!! ধরাযাক একটা জলজ উদ্ভিদের উপর একটা পোকা বসে আছে। এই মাছটি আস্তে আস্তে গিয়ে মুখ দিয়ে 'পুচুৎ' করে পানি ছুড়ে মারে। পোকাটির গায়ে লেগে ওটা পানিতে পরলেই এরা খপ করে মুখে ঢুকিয়ে খেয়ে নেয়।

courtesy: Warren Photographic

আর্চার ফিসের বৈজ্ঞানিক নাম Toxotes jaculatrix। দেখা যায় পোকার দিকে পানি ছোড়ার সময় এদের লক্ষ্য প্রায় নির্ভুল থাকে, এমনকি ২-৩ মিটার উচুতে বসে থাকা পোকাকেও এরা লক্ষ্যভেদ করতে পারে। তীরের মত পানি ছুড়ে শিকার করে বলেই এর এমন নাম।  ১৭৬৫ সালে প্রথম এই মাছটির সন্ধান পাওয়া যায় বাটাভিয়ায় (বর্তমান জাকার্তা)।

একজন ওলন্দাজ রাজা এই মাছটিকে এরকম অদ্ভুত প্রক্রিয়ায় খাদ্য সংগ্রহ করতে দেখে ফেলেন। কিন্তু সেই সময়ে তার কথার কেউ পাত্তাই দেয়নি। অনেক কষ্টে এরকম একটি মাছ ধরে তিনি লন্ডনের রয়েল সোসাইটিতে তিনি পাঠান। সেই সময় জাকার্তা থেকে লন্ডনে জাহাজে করে পৌছাতে তিন-চার মাস সময় লাগতো। অনেক কষ্টে জাহাজ হতে বহু হাত ঘুরে যে মাছটি রয়েল সোসাইটিতে পৌছালো সেটি আসল 'আর্চার ফিস' ছিলোনা।  মন খারাপ সেটি ছিলো বাটারফ্লাই ফিস।  রয়েল সোসাইটির জীববিজ্ঞানিরা অনেক চেষ্টা-চরিত্র করেও সেটিকে দিয়ে পোকা শিকার করাতে পারলেননা।

যাইহোক আবার একটি মাছ ধরে রয়েল সোসাইটিতে পাঠানো হলো। এবার মাছ ঠিকই ছিলো, কিন্তু সেটি জীবিত অবস্থায় পৌছালো না!



অনেক পরে ১৯০২ সালের দিকে কয়েকজন রাশিয়ান জীববিজ্ঞানী এই মাছটিকে আবিষ্কার করেন। এটিকে দেখে প্রথমেই তাদের মাথায় প্রশ্ন আসলো, এটি কিভাবে পানি ছুড়ে দেয়? অনেক গবেষণা করে প্রাণীবিজ্ঞানীরা বের করলেন আর্চার ফিস জ্বিহবাটাকে মুখের ভেতর বাকিয়ে ধরে একটা টিউবের মত আকৃতি সৃষ্টি করে , সেখান থেকে জোড়ে বাতাসের চাপ সৃষ্টি করে পানি ছিটকে দেয়। লক্ষ্য ঠিকঠাক থাকার জন্য এদের মুখের খুব কাছে বড়সড় দুটো চোখ আছে।

এরপর জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রশ্ন জাগলো এই মাছটি কিভাবে এতটা নির্ভুল ভাবে লক্ষভেদ করে? পানির নিচে থেকেতো আলোর প্রতিসরণের কারণে পোকাটির অবস্থান ঠিকভাবে বোঝাটা সহজ কাজ নয়!
courtesy: physicsclassroom
আরও কিছুদিন গবেষণা করে প্রাণীবিজ্ঞানীরা এর উত্তরও খুঁজে পেলেন। উত্তরটি  খুব সোজা, মাছটি পানি প্রতিসরনে বিভ্রান্ত হয়না। জীনবাহিত অভিজ্ঞতায় মাছটি ঠিকই পানি ছোঁড়ার আগমূহুর্তে সে পানির উপরিতলের সাথে এমনভাবে অবস্থান নেয় যেন পানি পিচকিরিটা ঠিক-ঠাক লম্বভাবে ছুটে যায়!! এতটুকু মাছ, কি চমৎকার বুদ্ধি!!!

১) না-মানুষী বিশ্বকোষ- নারায়ণ সান্যাল
২) www.naturia.per.sg

পূর্বে প্রকাশিতঃ সচলায়তন অক্টোবর, ২০১১