লিনাক্স !!

Windows এর সাথে আমার পরিচয় বেশ ছোটবেলা থেকেই । নিজের কম্পিউটার না থাকলেও আমার পরিচিত কারো বাসায় গেলে কম্পিউটার নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে বেশ ভালোই লাগতো । সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো কম্পিউটারে গেম খেলতে । একটু বড় হবার পর যখন বাসায় কম্পিউটার কেনা হলো , তখন আর আমার আনন্দ দেখে কে? কিছুদিন পর যখন বাসায় ইন্টারনেট নেবার পর খাওয়া আর ঘুম ছাড়া আমাকে কেউ কম্পিউটারের সামনে থেকে তুলতে পারতো না :D । ইন্টারনেটে রাত-দিন চলতো অবিরাম ব্রাউসিং আর game, music, software ডাউনলোড।
 হঠাৎ করেই একদিন টের পেলাম আমার কম্পিউটারে VIRUS!! ঢুকে পরেছে । যাই হোক avg অ্যান্টি-ভাইরাস দিয়ে স্ক্যান করে ভাইরাস গুলো দূর করে কোনমতে স্বস্তি পেলাম । যাক! বাচা গেলো । কিন্তু না!! কিছুদিন পর আবারও একই সমস্যা । ‘কম্পিউটার বিশারদ’ (!) আমার এক বন্ধু আমাকে বলল- ” আরে বেটা কি সব অ্যান্টি-ভাইরাস ব্যবহার করিস? avg একটা ভাইরাস স্ক্যানার হলো?? Norton বা Mcafee ব্যবহার করে দেখ । ”
 আমি আমার বন্ধুটির অনুরোধ রাখলাম। কিন্তু কিছুদিন পর আবার ভাইরাস!!! এবার আর scan করে কাজ হল না । পুরো কম্পিউটার ফরমেট দেওয়া লাগলো :( । আরেক বন্ধু বলল -” তোর যেহেতু নেট কানেকসন আছে ,তুই internet security ব্যবহার করে দেখ ।” আমি এই বন্ধুটির কথাও রাখলাম । cnet.com থেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় Kaspersky internet security 2007 ডাউনলোড করে ব্যবহার শুরু করলাম । কিছুদিন ভালোই গেলো। কিন্তু আবার ভাইরাস । Quarine করার পরও কম্পিউটার slow হয়ে গেলো ।
অতঃপর আমার পরিচিত একজন আমাকে বলল -” আপনি ভাইরাস এর ঝামেলা থেকে বাঁচতে চান? তাহলে linux ব্যবহার করে দেখতে পারেন । কিন্তু linux এ কাজ করা সমস্যা । command দিয়ে কাজ করতে হয় ।”

Linux Mint Desktop
এরই মধ্যে wikipedia তে কাজ করার সুবাদে আমাকে একদিন BDOSN (Bangladesh Open Source Network) অফিসে যেতে হলো । এবং আমি সেখান থেকে ubuntu 7.04 এর একটা live সিডি নিয়ে আসি । এবং মজার বিষয় যে ubuntu ব্যবহারের ফলে “লিনাক্সে শুধু command দিয়ে কাজ করতে হয়” এই ধারনাটা আমার দূর হয়ে যায় ।আমি windows এর পাশাপাশি dual boot করে linux ব্যবহার করতে থাকি ।
লিনাক্স একটি বেশ শক্তিশালী অপারেটিং সিস্টেম। এবং এর একটি বড় সুবিধা হল এটি open source । open source বলতে বোঝায় এটার source কোড উন্মুক্ত ।আপনিও এটির বিভিন্ন ফিচার পরিবর্তন করতে পারবেন । লিনাক্স তৈরি হয়েছে unix kernel থেকে । আপনি windows এ যে “ওয়েলকাম স্ক্রীন” দেখেন তার পেছনে রয়েছে অনেকগুলো complex প্রোগ্রামিং কর্মকান্ড । আর এই কর্মকান্ড গুলোর basis ই হলো kernel ।
লিনাক্সের সবচেয়ে বড় মজা হল এটি free , এটা আপনাকে পয়সা দিয়ে কিনতে হয় না । আমরা windows এর pirated cd কিনি ৪০/= টাকা বা ৫০/= টাকা দিয়ে । কিন্তু windows এর original cd এর দাম অনেক বেশি । আমার কম দামে কিনি কারন দোকানে যেগুলো বিক্রি হয় সেগুলো copy করা cd (আমি এত প্যাঁচাল পারতেছি ঠিকই!!! কিন্তু আমার windows এর পাইরেট সিডিটাও পাইরেটেড!!)। লিনাক্সে এই সমস্যা নেই। এটি আসলেই free। এবং এতে যে software গুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলোও free distribution করা হয় । লিনাক্স তৈরি হয়েছে বিশ্বের বাঘা বাঘা প্রোগ্রামারদের হাতে । যারা স্বেচ্ছায় কোন টাকা ছাড়াই এগুলো তৈরি করে গেছেন ।
আমি আর আমার এক বন্ধু লিনাক্স ব্যবহার শুরু করার পর যখনি সুযোগ পেতাম নিজেদের কম্পিউটারে linux এর বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউসন (যেমনঃ RedHat, Fedora, Mandriva, Ubuntu) install করে দেখতাম । এসব লিনাক্সের মাঝে আমার নিজস্ব পছন্দ UBUNTU। “লিনাক্সে command দিয়ে কাজ করতে হয়” এই ধারনার কিছুটা ব্যতিক্রম হলো UBUNTU । আপনি যদি আপনার কম্পিউটারে লিনাক্স ইন্সটল করতে না চান তাহলে ubuntu’র লাইভ সিডি চালিয়েও এর স্বাদ চেখে দেখতে পারেন । উবুন্টুর বর্তমান ভার্সন ubuntu 9.04 (Jaunty Jackelope) । এটি BDOSN অফিস থেকে আপনারা সংগ্রহ করতেপারবেন। আপনার ইচ্ছে আছে linux ব্যবহার করার , কিন্তু কোনটা ব্যবহার করবেন সেই দ্বন্দে ভুগছেন !! তাহলে আমি বলবো : LET’S STARTS WITH UBUNTU !!!


** পূর্বে প্রকাশিতঃ  Mad Science Blog (জুলাই, ২০০৯)