শুভ্র ও এক পশলা বৃষ্টি

জানালার পাশে বসে চায়ের কাঁপে হালকা চুমুক দিচ্ছে শুভ্র , আর ল্যাপটপে বাজছে হেমন্তের কণ্ঠে গাওয়া একটা রবীন্দ্র সংগীত। শিকাগোর ডাউনটাউনের কাছে একটা অ্যাপার্টমেন্ট ছোট্ট একটা রুম ভাড়া করে থাকে সে। এখানেই একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছে। গতকাল রাত থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে, ঠাণ্ডা পরেছে বেশ। এখানকার আবহাওয়া এরকমই অদ্ভুত। একদিন গরম, পরদিন ঠাণ্ডা।

হঠাত করেই বৃষ্টির কথা মনে পড়লো তার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২য় বর্ষে পড়ার সময় তাদের দুজনের পরিচয়, শুভ্রর এক বছরের ছোট ছিলো বৃষ্টি। বৃষ্টি অবশ্য ঢাবিতে পড়তো না, একটা কোর্স করতে গিয়ে দুজনের পরিচয়। সেখান থেকে বন্ধুত্ব। সেসব দিনের কথা মনে হয়ে শুভ্রর মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। 

ফেব্রুয়ারি মাস, বইমেলা চলছিল তখন । বইমেলার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় শুভ্র খেলাচ্ছলে বৃষ্টিকে বলেছিল, চলো যুগলদের মতো হাত ধরে হাঁটি। লজ্জা পেয়ে বৃষ্টি মুখ লুকিয়েছিল। এরকম খুনসুটির একফাকে হঠাতই বৃষ্টি বলেছিল - শোন, তোমার হাত ধরতে আমার কোন আপত্তি নেই। ঘটনাটা বুঝতে শুভ্রর একটু সময় লেগেছিলো। এর ঠিক একমাস পর ফুলার রোডের বৃটিশ কাউন্সিলের সামনে বৃষ্টিকে বলেছিল ‘ভালোবাসি’। বৃষ্টিকে সেকথা বলার সময়ে সংকোচে শুভ্রের কান গরম হয়ে গিয়েছিল। সেকথা মনে পরে খুক করে একটু হেসে দিলো সে।

খুব সামান্য কারণেই দুজনের ব্রেকআপ হয়েছিলো। কারণটা এতোই ছোট যে এখন আসলে ঠিকমতো মনেও নেই। মোকাররম ভবনের সামনে বসে একথা সেকথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই ঝগড়া শুরু। ঝগড়ার এক ফাঁকে বৃষ্টি বললো , সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে আমাকে বাসায় যেতে হবে। দুজন মিলে রিকশা করে শান্তিনগর আসে। সারাটা পথ কেউ কোন কথা বলেনি। বাসায় গিয়ে পরদিন একটা ছোট্ট sms পাঠিয়ে সম্পর্কের ইতি ঘটিয়ে দেয় শুভ্র। অনেকটা জেদ করেই সে আর বৃষ্টির খোঁজ রাখেনি।

এদিকে অনার্স ফাইনালের সময় এসে গিয়েছিলো। GRE দিয়ে স্কলারশিপ পাওয়া লাগবে, নিজের ক্যারিয়ার গড়তে হবে এই ভাবনায় মনোনিবেশ করে শুভ্র। স্কলারশিপ সে পেয়েও যায়, আমেরিকা চলে আসে শুভ্র। আসার আগেই কোন এক বন্ধুর মুখে শুনেছিলো বৃষ্টির বিয়ের কথা হচ্ছে। স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় যাচ্ছে সে, পেছন দিকে আর তাকাতে চায়নি। শুনেছে বৃষ্টি নাকি এখন হাজবেন্ডের সাথে অস্ট্রেলিয়া থাকে।
কৌতূহলের বশেই ফেসবুক খুলে বৃষ্টির প্রোফাইলটা খুঁজে বের করে শুভ্র । বৃষ্টি দেখতে আগের মতই আছে। ফেসবুকে কি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবে? একটা মেসেজ দিয়ে কি জিজ্ঞাসা করবে সে কেমন আছে? বৃষ্টি কি উত্তর দিবে? নাকি আগের মতো মেজাজ দেখাবে?
ইমেইলের নোটিফিকেশনে বাস্তবে ফিরে এলো শুভ্র , প্রফেসর মেইল দিয়েছে। কাজ করতে হবে। ফেসবুকটা বন্ধ করে কাজে মনযোগ দিলো সে…