নিরাপদ ও ব্যালেন্সড ব্যাটারি চালিত তিনচাকার বাহনের খসড়া

বাংলাদেশের অধিকাংশ স্থানে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়ার জন্য তিন চাকার যানবাহন (যেমনঃ রিকশা, ভ্যান, সিএনজি ইত্যাদি) বেশ জনপ্রিয়। এর মধ্যে রিকশা এবং ভ্যান সাধারণত মানুষের পেশীশক্তি দ্বারা চালিত হয়ে থাকে। কিন্তু আজকাল যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতা ও দেশীয় প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে ব্যাটারিচালিত রিকশা বা ভ্যানের বেশ প্রচলন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে এই ব্যাটারিচালিত রিকশা একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবিকা অর্জনের চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Bangladeshi Rickshaw
ছবিঃ বাংলাদেশে পরিচিত রিক্সার ডিজাইন।


ব্যাটারিচালিত রিকশার ডিজাইন অত্যন্ত সাদামাটা। যুগযুগ ধরে চলে আসা সেই পদচালিত রিকশাগুলির পেছনের চাকার সাথে একটি ছোট মোটর লাগিয়ে দেওয়া হয়, আর প্যাসেঞ্জারের সিটের নিচে থাকে একটি ব্যাটারি। রিকশাওয়ালার হ্যান্ডেলের সাথে সংযুক্ত থাকে ওই ব্যাটারি ও মোটরের একটি সুইচ। সমস্যা হলো, রিক্সার অরিজিনাল ডিজাইন দ্রুত গতিতে চলার উপযোগী নয়। ফলে মোটর লাগিয়ে জোরে চালানোর সময় নিয়ন্ত্রণ হাড়িয়ে দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাকে একদম নাকচ করে দেওয়া যায়না।

কিন্তু দূর্ঘটনা ঘটতে পারে, সেই অজুহাতে ব্যাটারি চালিত রিক্সা চলাচল হঠাৎ করে বন্ধ করে দিলে একদিকে বহুমানুষ যেমন আয়রোজগারের মাধ্যম হাড়িয়ে একদম পথে বসে যাবে, তেমনি সাধারণ জনগণ সল্প-দূরত্বে যাতায়াতের জন্য সমস্যায় পরে যাবে। বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালের প্রচণ্ড গরমে একজন মানুষকে টেনে নিয়ে যাওয়া কম পরিশ্রমের কাজ নয়। অপরদিকে দূর্ঘটনায় অঙ্গহারানো অনেকেই পেশীচালিত রিক্সা চালাতে অক্ষম, এবং তাঁরা এই ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালিয়ে জীবিকা অর্জন করছে।

পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি করতে গিয়ে শিখেছি, একটা সমস্যা হাজির হলে সেটা ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে হয়না। সমস্যাটিকে ছোট ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে অল্প অল্প করে সমাধান করতে হয়। প্রথমে দেখাযাক, কোন কোনভাবে এরকম যানবাহনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

১) তিনচাকার বাহন চলতে চলতে ব্যালেন্স হারিয়ে উল্টে যেতে পারে।
২) প্রচণ্ড বেগে ছুটতে শুরু করলে বাঁক নেবার সময় উল্টে যেতে পারে।
৩) ইমার্জেন্সি মূহুর্তে ব্রেক কষে থামতে না পেরে অন্য গাড়ি বা পথচারীর সাথে সংঘর্ষ ঘটতে পারে।

বেশ ঘাটাঘাটির পর হঠাৎ করে খুঁজে পেলাম ১৯৮২ সালে Huston, Graves & Johnson এর প্রকাশিত একটি রিসার্চ পেপারে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের stability নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা করেছেন [1]। দেখাযাক উনাদের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে এবং পদার্থবিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে গাণিতিকভাবে এই ব্যাটারি চালিত রিক্সার ডিজাইনটিকে আরেকটু নিরাপদ করা যায় কিনা (কিছু জটিল সমীকরণ চলে এসেছে, যা সাধারণ মানুষের কাছে একনজরে দূর্বোধ্য লাগতে পারে, সেজন্য দুঃখিত; আশা করছি যারা আসলেই এগিয়ে এসে ডিজাইনটিকে বাস্তবায়ন করবেন, তাদের জন্য বুঝতে সমস্যা হবেনা)।

পার্শ্বীয় সাম্যাবস্থা

ব্যালেন্স কিভাবে আনতে হবে সেটা বোঝার আগে বুঝতে হবে Center of mass কাকে বলে। একটা উদাহরণ দেই, দাঁড়িপাল্লার মাঝখানের দড়ি ধরে যখন ঝুলানো হয়, সেটি কিন্তু এদিক ওদিক হেলে পরে না, কারণ দাঁড়িপাল্লার মাঝ বরাবর দড়িটি এমনভাবে বাঁধা হয় যেন সেটি দুইপাশের ভরকে ঠিকভাবে ব্যালেন্স করতে পারে। ঠিক একই ভাবে তিনচাকায় চালিত বাহনটিকে এমনভাবে ডিজাইন করা প্রয়োজন যেন ব্যাটারি, যাত্রী এবং ইঞ্জিনের ভারে একদিকে হেলে না পরে। যখন একটা বস্তু গতিশীল থাকে, তখন তার গতিকে equation of motion দিয়ে প্রকাশ করা যায়। রিকশার মতো তিনচাকায় চালিত বাহন যদি সমবেগে গতিশীল থাকে তাহলে equation of motion গুলি হবে- \begin{align} m\dot{V}_y + mV_x + \left( \dfrac{l_1 C_{\alpha f} - 2 l_2 C_{\alpha r}}{V_x} \right)\Omega_z + \left(\dfrac{C_{\alpha f}+2C_{\alpha r}}{V_x}\right) V_y = 0\\ \end{align} এবং \begin{align} I_z \dot{\Omega}_z + \left( \dfrac{l_1^2 C_{\alpha f}+2 l_2^2 C_{\alpha r}}{V_x} \right) \Omega_z + \left( \dfrac{l_1 C_{\alpha f} - 2l_2 C_{\alpha r}}{V_x} \right) V_y = 0 \end{align} এখানে $m$ হলো চাকা, ইঞ্জিন, মোটর, ব্যাটারি সব কিছু লাগানোর পর রিক্সাটির মোট ভর।
$I_z$ হলো ভরকেন্দ্রের লম্ব বরাবর যদি একটা অক্ষরেখা টানা হয়, তার সাপেক্ষে রিক্সাটির জোড়তার ভ্রামক।
$V_x$ হলো, x-অক্ষ বরাবর রিক্সার গতি।
$V_y$ হলো, y-অক্ষ বরাবর রিক্সার গতি।
$\Omega_z$ হলো, ভরকেন্দ্রের লম্ব বরাবর অক্ষের সাপেক্ষে রিক্সার ঘূর্ণন গতি।
$C_{\alpha f}, C_{\alpha r}$ হলো, রিক্সার সামনে ও পেছনের চাকার টায়ারের cornering stiffness। সহজ ভাষায় বলতে গেলে রিক্সাটি যেদিকে গতিশীল, রিক্সাটার চাকা যদি একদম সেদিক বরাবর না থাকে, তাহলে চাকার তলে লম্ব বরাবর একটি বল কাজ করে। সেই বলের মান অতিরিক্ত হলে চাকা পিছলে গিয়ে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

হিসাবের সুবিধার জন্য ধরা যাক, \begin{align*} \eta_1 &=\dfrac{C_{\alpha f}+2C_{\alpha r}}{V_x}\\ \eta_2 &=mV_x + \dfrac{l_1 C_{\alpha f}-2l_2 C_{\alpha r}}{V_x}\\ \eta_3 &= \dfrac{l_1C_{\alpha f}-2l_2C_{\alpha r}}{V_x}\\ \eta_4 &= \dfrac{l_1^2 C_{\alpha f} + 2l_2^2 C_{\alpha r}}{V_x} \end{align*} এখন সমীকরণ (1) ও (2) এ উপরের $\eta$ এর মানগুলি প্রতিস্থাপিত করে equation of motion দুটির charecteristic equation (এই সমীকরণের সাথে চারিত্রিক সনদপত্রের কোন যোগাযোগ নাই) হিসেব করা হয়, তাহলে সেটি হবে- \begin{align} \lambda^2 + \left( \dfrac{\eta_1}{m}+\dfrac{\eta_4}{I_z}\right) \lambda + \left(\dfrac{\eta_1 \eta_3-\eta_2\eta_3}{I_z m}\right)=0 \end{align} রিক্সাটির পার্শ্বীয় সাম্যাবস্থার জন্য এই charecteristic equation এর zeroth order পদটিকে অবশ্যই ধনাত্মক (শূন্যের থেকে বড় সংখ্যা) হতে হবে। অর্থাৎ- \begin{align} L+\dfrac{V_x^2}{G} \left(\dfrac{W_f}{C_{\alpha f}}-\dfrac{W_r}{C_{\alpha r}} \right) \gt 0 \end{align} এখানে $L$ হচ্ছে সামনের চাকা থেকে পেছনের চাকার দূরত্ব।
$G$ মহাকর্ষ ধ্রুবক।
$W_f$ ও $W_r$ রিক্সার সামনের ও পেছনের চাকার উপর আপতিত সর্বমোট ওজন।
সমীকরণ (4) থেকে পাওয়া যায়- \begin{align} W_f &= \dfrac{Wl_2}{L}; & W_r &=\dfrac{Wl_1}{2L} \end{align} ধরাযাক, $K_{US}$ হচ্ছে রিক্সার understeer coefficient। এবং \begin{align} K_{US} &= \left(\dfrac{W_f}{C_{\alpha f}}-\dfrac{W_r}{C_{\alpha r}} \right) \end{align} তাহলে, রিক্সাটির পার্শ্বীয় সাম্যাবস্থার জন্য প্রয়োজন- \begin{align} l_2&\geq \dfrac{1}{2}l_1\\ \Rightarrow l_2 &\geq \dfrac{1}{3}L \end{align} অর্থাৎ ব্যাটারি, মোটর ইত্যাদি সরিয়ে এমনভাবে বসাতে হবে যাতে রিক্সার সামনের চাকা থেকে পেছনের চাকার এক-তৃতীয়াংশ দূরত্বে center of mass অবস্থিত থাকে।

বাঁক নেবার সময় রিক্সার সাম্যাবস্থা

তিনচাকার বাহন যেমন রিক্সা, বাঁক নেবার জন্য সামনের চাকার উপর নির্ভর করে। রিক্সার সামনের চাকাকে ৩৬০ ডিগ্রি কোণে ঘুরতে দিলেই যে সেটি তাড়াতাড়ি ঘুরতে পারবে এমন কোন কথা নেই, স্থিরভাবে ব্যালেন্স রেখে ঘুরার কোণকে steady steer angle বলে। ধরাযাক রিক্সাটি $V$ বেগে চলছে এবং কোন একটা গলিতে ঢোকার জন্য এটিকে $R$ দৈর্ঘ্যের ব্যাসার্ধের একটা বক্ররেখা বরাবর বাঁক নিতে হবে। নিরাপদভাবে বাঁক নেবার জন্য সামনের চাকাটিকে যতটুকু ঘুরাতে হবে সেটিকে $\delta_f$ দিয়ে প্রকাশ করা হলো। Huston, Graves & Johnson এর রিসার্চ অনুযায়ী $\delta_f$ এর মান নির্ভর করবে সামনের চাকা থেকে পেছনের চাকার দূরত্ব ($L$), রিক্সার বেগ ($V$) এবং বাঁকটির ব্যাসার্ধের ($R$) উপর- \begin{align} \delta_f &=\dfrac{L}{R}+\left(\dfrac{W_f}{C_{\alpha f}}-\dfrac{W_r}{C_{\alpha r}} \right) \dfrac{V^2}{GR} \end{align} এই সূত্রের সাহায্যে রিক্সার দৈর্ঘ্য ও তার সাথে যুক্ত মোটরের উপর নির্ভর করে সামনের চাকা এদিক ওদিক steer করার একটি লিমিট করে দেওয়া যেতে পারে, যাতে করে বাঁক নেবার সময় রিক্সা উলটে পড়ে না যায়।

বাঁক নেবার সময় ব্রেক কষে থামার সাম্যাবস্থা

গতিশীল বাহন বাঁক নেবার সময়ে হঠাৎ করে থামতে হলে সেটি উলটে পড়তে পারে। যারা সাইকেল চালিয়ে অভ্যস্ত তারা মোটামুটি এরকম সমস্যার সাথে পরিচিত। এছাড়া যদি F1 racing নিয়মিত দেখে থাকেন, তাহলে দেখবেন, বাঁক নেবার সময় গতি কমাতে গিয়ে অনেক গাড়িই নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে। রিক্সা যদিও F1 রেসিংকারের গতিতে ছুটবে না, তবুও রিক্সার আকার, সর্বোচ্চগতি ও বহনকৃত ভর মিলিয়ে যাতে ব্রেক কষার সময় ব্যালেন্স না হারিয়ে যায় সেটি বিবেচনায় রাখতে হবে। রিক্সার মত তিনচাকার বাহনের ক্ষেত্রে এরকম পরিস্থিতিতে উলটে না পড়ার শর্তটি হলো- \begin{align} Z\cos (\phi - \theta) \lt \dfrac{Wb}{2h} \dfrac{l_1}{\sqrt{L^2+(b/2)^2}} \end{align}

মোটরের মাধ্যমে ত্বরণ বৃদ্ধির সময়ে রিক্সার সাম্যাবস্থা

যদি রিক্সার উপরের অংশে বেশি ভার চলে যায়, তাহলে গতি বাড়াতে থাকলে একটা নির্দিষ্ট গতির পর রিক্সাটি উলটে যেতে পারে। রিক্সাটি ঠিকভাবে চলার জন্য রিক্সার ডিজাইনকে \begin{align} \dfrac{a}{g}\lt \dfrac{b}{2h}\dfrac{l_1}{L} \end{align} শর্তটি মেনে চলতে হবে। এবং এই শর্তটি থেকে আমরা রিক্সাটি যে বেগে গতিশীল থাকলে উলটে পড়বে না, সেটি হিসেব করে ফেলতে পারি- \begin{align} V_{ro} = \sqrt{\dfrac{gRbl_1}{2hL}} \end{align}

ব্যাটারিচালিত রিক্সায় যুক্ত মোটরের সর্বোচ্চ শক্তি নির্ধারন

ব্যাটারি চালিত মোটরের শক্তি সাধারনত Watt দিয়ে পরিমাপ করা হয়। আর রিক্সাটি কত জোরে ছুটতে পারবে সেটা নির্ভর করে মোটরের ক্ষমতা, ব্যাটারির পাওয়ার এবং মোটর চালনাকারী কন্ট্রোলারের উপর। কম শক্তির মোটর কতৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ গতিবেগ অবশ্যই বেশি শক্তি মোটর কতৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ গতিবেগের চেয়ে কম হবে। ব্যবহৃত মোটর যেন কোনভাবেই রিক্সার সর্বোচ্চগতিকে $V_{ro}$ এর উপরে নিয়ে যেতে না পারে সেই অনুযায়ী ব্যাটারিচালিত রিক্সায় নির্দিষ্ট watt এর মোটর ব্যবহারের নীতিমালা নির্ধারন করে দেওয়া যেতে পারে।

ব্রেকিং সিস্টেম পরিবর্তন

যে কোন যানবাহনে ব্রেক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সময়মতো ব্রেক কষে থামাতে পারলে অনেক দূর্ঘটনা সহজেই এড়ানো যায়। আমাদের দেশে রিক্সা বা ভ্যানের জন্যে সাধারনত rim brake ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এধরনের ব্রেকে সামনের চাকার rim এর দুইপাশে রাবারের প্যাড লাগানো থাকে। রিক্সাচালক হ্যান্ডেলের ব্রেকে চাপ দিলে প্যাড দুটি সামনের চাকার rim কে চেপে ধরে এবং সেটিকে ঘুড়তে বাঁধা দেয়। ব্রেকপ্যাড ও রিক্সার rim এর ঘর্ষনে গতিশক্তি পরিবর্তিত হয়ে তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং রিক্সাটি আস্তে আস্তে থেমে যায়।

rim braking
ছবিঃ সামনের চাকায় ব্যবহৃত rim ব্রেক।


কমগতিশীল বাহনের ক্ষেত্রে এধরনের ব্রেক মোটামুটি ভালোই কার্যকরী (যদি নিয়মিত ব্রেকপ্যাড বদলানো হয়)। কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিক্সার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চলার সময় এধরনের ব্রেক রিক্সাকে সময়মতো থামাতে খুব বেশি কার্যকরী নয়। তার উপর যেহেতু পেছনের চাকা মোটরের মাধ্যমে গতিশীল, সেহেতু শুধু সামনের চাকায় ব্যবহৃত rim ব্রেকের মাধ্যমে রিক্সাটিকে বিপদজনক মূহুর্তে থামাতে পারা অনেকটা ভাগ্যের উপরই ছেড়ে দিতে হবে।

এ সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য ব্যাটারি চালিত রিক্সায় rim ব্রেকে পরিবর্তে disk ব্রেক ব্যবহার করা যেতে পারে। disk ব্রেকের ক্ষেত্রে চাকার পাশে একটা ছোট disk লাগানো থাকে। ব্রেক লিভারে চাপ দিলে ব্রেকপ্যাড ওই disk কে খুব টাইট করে চেপে ধরে বাহনটিকে থামতে সাহায্য করে।

disk braking
ছবিঃ চাকার সাথে ব্যবহৃত disk ব্রেক।


পরীক্ষা করে দেখা গেছে, rim ব্রেকের চেয়ে disk ব্রেক তুলনামূলকভাবে দ্রুত গতিশক্তিকে তাপশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারে, এবং বাহনটিকে দ্রুত থামতে সাহায্য করে [2]। Disk এর ব্যাসার্ধ বাড়িয়ে এর স্টপিং পাওয়ারকে বাড়ানো যায়, যেটি rim ব্রেকের ক্ষেত্রে করা সম্ভব নয়। এবং আধুনিক সাইকেলগুলিতে এধরনের ব্রেক আজকাল প্রচুর ব্যবহার হচ্ছে বলে এটি সহজলভ্যও বটে।

শেষ কথা

তিনচাকার যানবাহনের ডিজাইনের জন্য আগেও অনেকে গবেষনা করেছেন। তাদের প্রাপ্ত রেজাল্টগুলো কিভাবে আমাদের দেশীয় ব্যাটারিচালিত রিক্সার ক্ষেত্রে ব্যবহার করে আরেকটু ভালো এবং আরেকটু নিরাপদ বাহন হিসাবে ডিজাইন করা যায় সেটা নিয়ে এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। কোন ডিজাইনের বাহন কিভাবে বানালে এবং সেটি কতটুকু গতিতে চালালে মোটামুটি নিরাপদভাবে রাস্তায় চালানো যাবে সেগুলি পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র ব্যবহার করেই বের করে ফেলা যায়, এইপোস্টে সেটাই তুলে ধরা হয়েছে। একটি যানবাহনের নকশা করার সময় তার অনেকগুলি অংশ থাকে এবং আমি বিশ্বাস করি যারা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর যানবাহন ডিজাইনের সাথে যুক্ত রয়েছেন, তারা এই ডিজাইনটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারবেন।

ব্যাটারিচালিত রিক্সা কোন রূপকথা নয়, অন্যান্য অনেক দেশেই ব্যাটারি চালিত রিক্সা ব্যবহার হয়ে থাকে। নিচের এই ছবিটি আমার তোলা, শিকাগো রিভারের পাশের রাস্তায় টুরিস্টদের নিয়ে ব্যাটারিচালিত একটি রিক্সা চলছে।

ছবিঃ শিকাগোর রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিক্সা, মূলতঃ টুরিস্টদেরকে লেক মিশিগানে ও শিকাগো রিভারের আশেপাশে ঘুরিয়ে নিয়ে আসে।


একটু লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবেন এদেশের ব্যাটারিচালিত রিক্সার ডিজাইনটি একটু আলাদা। রিক্সাচালকের বসার জায়গাকে একটু সামনের দিকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে, যাতে পুরো বাহনের center of mass সাম্যাবস্থায় থাকে। আমাদের দেশেও বরং ব্যাটারিচালিত রিক্সা নিষিদ্ধ না করে বরং সেটির ডিজাইনকে উন্নত করার মাধ্যমে নিরাপদ বাহনে রূপদান করা যেতে পারে।

এই পোস্টের বিভিন্ন ডিজাইন এবং হিসেব পুরোপুরি একটি ভলেন্টিয়ারি উদ্যোগ। যারা এই পোস্টটি পড়ছেন, তারা অথবা তাদের পরিচিত কোন ইঞ্জিনিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবক যদি উদ্যোগী হয়ে দেশীয় প্রযুক্তির সাহায্যে নিরাপদ ব্যাটারীচালিত রিক্সা তৈরির জন্য এইপোস্টে আলোচিত গাণিতিক ডিজাইনটিকে বাস্তবে রূপ দিতে এগিয়ে আসেন তাহলেই লেখাটি সার্থক হয়েছে বলে মনে করবো।

References:
  • 1) Huston, Jeffrey C., et al. “Three Wheeled Vehicle Dynamics.” SAE Transactions, vol. 91, 1982, pp. 591–604. JSTOR, www.jstor.org/stable/44631967.
  • 2) Talati, F., Jalalifar, S. Analysis of heat conduction in a disk brake system. Heat Mass Transfer 45, 1047 (2009). https://doi.org/10.1007/s00231-009-0476-y