১.৩ স্কলারশীপের আবজাবঃ CGPA কম হলে কী করবো?

CGPA এর গুরুত্বঃ

দেশের বাইরে স্কলারশীপ পাওয়ার জন্য যে বিষয়গুলি গুরুত্বপূর্ণ তার একটি হলো CGPA। সত্যি বলতে admission offer এর জন্য CGPA এর কিছুটা গুরুত্ব অবশ্যই আছে, বিশেষ করে যদি যদি মাস্টার্স বা পিএইচডিতে এপ্লাই করতে চাও, তাহলে তারা অবশ্যই তোমার অনার্সের CGPA দেখতে চাইবে। এবং স্কলারশীপের বিবেচনার জন্য অন্যান্য রিকোয়ারমেন্টের মধ্যে এই অনার্সের CGPA বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি তোমার CGPA কম থাকে তাহলে কী করবে? কম সিজিপিএ দিয়ে কি আদৌ স্কলারশীপ পাওয়া যাবে? প্রথমেই বলে রাখি, cgpa কম হলে হতাশ হওয়ার কোন কারণ নাই। সত্যি বলতে আমার নিজের CGPA ও খুব আহামরী কিছু ছিলোনা। এমনকি আমার ব্যাচের আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব আমার মতোই মোটামুটি cgpa নিয়ে এপ্লাই করে দেশের বাইরে সম্পূর্ন স্কলারশীপ নিয়েই অ্যাডমিশন পেয়েছে। কিভাবে আমরা সেই অসাধ্যকে সাধন করলাম, সেটা নিয়েই এই পোস্টে আলোচনা করবো।

বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করাঃ

CGPA একটু কম হলে বিশ্ববিদ্যালয় বাছাই করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব ভালো CGPA চায়, কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে একটু কম হলেও অ্যাপ্লিকেশন বিবেচনা করে। যদি তোমার CGPA তাদের cutoff মানের চেয়ে কম হয়, তাহলে তোমার অ্যাপ্লিকেশন তারা নাও বিবেচনা করতে পারে। এজন্য সবকিছুর আগে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের cutoff তোমার cgpa এর সাথে মিলবে সেগুলির একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলবে।

১) প্রত্যেকটা বড় বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজস্ব ওয়েবসাইট থাকে। এবং সেখানে admission requirement একটা পেইজ থাকে। সেখান থেকে দেখে নাও তারা সর্বনিম্ন কত CGPA চেয়েছে এবং সেটা তোমার CGPA এর সাথে মানানসই কিনা।

২) যদি ওয়েবসাইতে কোন cutoff উল্লেখ না করা থাকে, তাহলে অ্যাডমিশন অফিসের ইমেল খুজে বের করে তাদের জিজ্ঞেস করতে পারো যে ভর্তির জন্য cutoff CGPA কত!

৩) এরপর তোমার ডিপার্টমেন্টের পেইজে গিয়ে সেখান থেকে গ্রাজুয়েট অফিসার অথবা ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যানের ইমেইল অ্যাড্রেস নিয়ে, খুব ভদ্রভাবে জিজ্ঞেস করো যে ডিপার্টমেন্টে সাধারনত কোন রেঞ্জের CGPA থাকলে তারা ভর্তি নেয়।

এই ইনফোরমেশনগুলি দিয়ে মোটামুটি একটা লিস্ট বানিয়ে ফেলো। লিস্টটা হতে পারে এরকম-

University name min Required CGPA min IELTS/TOEFL score min GRE/GMAT score Compatible? Y/N
University of Somewhere 4.0 TOEFL 120/ IELTS 9.0 Quant: 168, Ver:168 N
University of SomeotherPlace 3.0 TOEFL 80/ IELTS 6.5 Quant: 160, Ver:158 Y


আমি শুরুর দিকে USNews ওয়েবসাইট থেকে আমার সাবজেক্টের জন্য ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলির নাম বের করে প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ইমেইল দেওয়া শুরু করতাম (কারণ তখন এদেশে সকাল) এবং সকাল বেলা উঠে রিপ্লাই দিয়েছে কিনা দেখতাম। এভাবে কয়েকমাস ধরে প্রায় শ'খানেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমেইল করে সেখান থেকে বেছে বেছে ১০-১২টা বিশ্ববিদ্যালয়ের শর্টলিস্ট করেছিলাম। এবং সেই শর্টলিস্ট থেকে কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাই করে দুইটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুল ফান্ডিংসহ অফার লেটার পেয়েছিলাম।

আমি দেখেছি, অনেকেই এইধাপটিকে তেমন একটা গুরুত্ব না দিয়ে ফেসবুকগ্রুপ বা অনলাইন থেকে এর-ওর কথা শুনে আন্দাজি কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাই করে বসে থাকে। কিন্তু একটু সময় লাগলেও এভাবে শর্টলিস্ট করে এপ্লাই করলে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক অনেক বেড়ে যায়।

রিসার্চ প্রজেক্টে কাজ করাঃ

দেশের বাইরে এপ্লাই করার জন্য রিসার্চের অভিজ্ঞতা থাকাটা একটা বিরাট ভূমিকা পালন করে। এমনকি অনেক সময় অনেকভালো CGPA পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীর চেয়ে, মোটামুটি CGPA কিন্তু রিসার্চের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন ছাত্র-ছাত্রীদের অ্যাডমিশনের কমিটি আলাদাভাবে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আর তোমার CGPA যদি খুব একটা ভালো না হয়, তাহলে আমি বলবো অবশ্যই কোন প্রফেসরের সাথে কথা বলে তার সাথে গবেষনামূলক কোন একটা প্রজেক্টে অংশ নিতে। যদি তোমার বিশ্ববদ্যালয়ে গবেষনার সাথে যুক্ত তেমন কেউ না থাকে, তাহলে তোমার আশেপাশে অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করে দেখতে পারো। যেমন আমাদের ডিপার্টমেন্টের অনেক শিক্ষকের সাথেই আশেপাশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্র/ছাত্রী এসে ছোটখাটো প্রজেক্টে অংশ নিতো। আর যদি কোনভাবে ভালো একটা জার্নালে অন্তত একটা পেপার পাবলিশ করতে পারো, তাহলে আরও ভালো।

তবে খেয়াল রাখবে, জার্নালটির Impact factor যেন ভালো থাকে। দেশে-বিদেশে অনেক হাবিজাবি জার্নাল রয়েছে, যারা টাকার বিনিময়ে হাবিজাবি পেপারও পাবলিশ করে থাকে (যদি ভেবে থাকো এগুলিতে পাবলিশ করে রিসার্চারের খাতায় নাম লেখাবে, তাহলে ভুল করবে) এসব জার্নালের বদনাম দেশের বাইরের প্রফেসররা খুব ভালোই জানেন। এসব জার্নালের কাছেধারে না যাওয়াই ভালো, কারণ এতে উল্টো তোমার অ্যাপ্লিকেশনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

Skill ডেভেলপ করাঃ

বিশ্ববিদ্যালয় হলো গবেষনার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির স্থান। দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের দেশে এখানে ওখানে শ'খানেক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও রিসার্চের সাথে যুক্ত প্রফেসরদের সংখ্যা অনেক কম। অনেকেই আমাকে বলেছে তারা রিসার্চ করতে আগ্রহী, কিন্তু তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমন কোন শিক্ষক নেই; এমনকি তাদের আশেপাশে সেরকম কোন প্রফেসরও নেই। যদি ব্যাপারটা সেরকম হয়ে থাকে, তাহলে চেস্টা করবে তোমার সাবজেক্টের কোন একটা বিষয় খুব ভালো করে Skill ডেভেলপ করতে। যেমনঃ আমার পদার্থবিজ্ঞানে C++, Fortan, Python এধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ বেশ ব্যবহার করা হয়। রিসার্চ প্রজেক্টের পুরো হিসেবটা আমার C++ লেখা ছিলো। তেমনি তোমার সাবজেক্টে যে বিষয়গুলি ভবিষ্যতে কাজে লাগবে সেগুলোর উপর বেশি করে জোর দিতে পারো। এবং এটি অবশ্যই তোমার এপ্লিকেশনকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

GRE/GMAT, IELTS/TOEFL এ ভালো ফলাফল করাঃ

হয়তো তোমার CGPA মোটামুটি, কিন্তু GRE এর Quantitive এ তুমি খুব ভালো একটা স্কোর করে দেখিয়ে দিতে পারবে যে তুমি আসলে হিসাবে ভালো। আবার ভার্সিটিগুলোতে অনেক সময় গ্রাজুয়েট ছাত্র/ছাত্রীদের Teaching assistant হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এজন্য IELTS/TOEFL এর Speaking আর Listening এ যদি খুব ভালো স্কোর তুলতে পারো, তাহলে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই তোমাকে Central funding থেকে Teaching assistant হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিবেচনা করবে। কাজেই CGPA খারাপ হলেও এই টেস্ট স্কোরগুলি দিয়ে সেটা পুষিয়ে নিতে পারবে।

ভালো Recommendation Letter, SOP এবং Resume এর গুরুত্বঃ